প্রবন্ধ

সংবাদপত্র এবং কিছু কথা

প্রথমেই আমেরিকান খুবই ছোট একটা গল্প বলে নেই। ক্যালিফোর্নিয়ার কোন এক রাস্তা দিয়ে এক আমেরিকান মেয়ে শিশু হেটে যাচ্ছিল। তাকে আক্রমন করে বসল একটা কুকুর। আমেরিকান পাগলা কুকুর। পাশেই আমেরিকান এক পুলিশ দাড়িয়ে ব্যাপারটা দেখছিল। কিন্তু মেয়েটির সাহায্যে এগিয়ে আসছিল না। হঠাৎ এক যুবক এসে কুকুরটাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলল। মেয়েটি উদ্ধার পেল। ঐ পুলিশ তখন দৌড়িয়ে এসে যুবককে বলল. -সাবাশ ব্যাটা সাবাশ। পুলিশ সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে যুবকের সাহসের কথা বলল। পরদিন পত্রিকায় হেডলাইন হলো “ আমেরিকান যুবকের সাহসের জন্য রক্ষা পেলএক আমেরিকান শিশু”। ঐ দিন যুবক এই খবর দেখে আবার সাংবাদিকদের কাছে গেল এবং বলল, সে একজন ফিলিস্তিনী। তারপরের পত্রিকার শিরোনাম হল “ ফিলিস্তিনী জঙ্গী মেরে ফেলল আমেরিকান কুকুর”।

৭১ এ যুদ্ধ চলাকালে নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দুস্কৃতিকারী’ বলা হত। ‘নাকি’ বলছি কারন আমার জন্ম ৭১ এর অনেক পরে। অনেক সংবাদপত্র, টেলিভিশন মিডিয়া, রেডিও নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই শব্দটা ব্যবহার করত। এখন অবশ্য আমি নিজেই এসব শব্দ শুনতে পাই। তবে তা অন্যান্য দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। ‘ফিলিস্তিনী জঙ্গী’, ‘কাশ্মিরী জঙ্গী’ ‘ইরাকী ও আফগানিস্তানী জঙ্গী ’ শব্দগুলো এই সুশীল সমাজের দেশ বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও  হরহামেশাই ব্যবহার করছে। অথচ এই ‘জঙ্গী’ গুলো তাদের দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে বাচাতে নিজেদের প্রান ঢেলে দিচ্ছে। যেমনটা দিয়েছিল এদেশের বঙ্গসন্তানেরা ১৯৭১ সালে।
এবার ছোট একটা আত্নজীব‍নী বলি। ২০০৪ কি ২০০৫ সাল হবে। ঢাবির মুহসীন হল ৫/ক রুমে থাকি। এটা একটা গনরুম। যাদের গনরুম সম্পর্কে ধারনা নেই তাদের জন্যই বলছি, গনরুম হল এমন একটা ছোট রুম যেখানে ১০/১২ জন ছাত্র থাকে। তো একদিন দুপুরে ঘুমিয়ে আছি। রুমে আমরা মাত্র ৪/৫ জন। এল এক সাংবাদিক। দেশের সবচেয়ে নিরপেক্ষ সংবাদপত্রের সাংবাদিক। এসে বলল আমাদের এই দুরবস্থার একটা ছক্ষি তুলে তা পত্রিকায় ছাপা হবে। আমরা সানন্দেই পোজ দেয়ার জন্য রাজী হলাম। সবাইকে ঘুমের ভান করতে হবে। কিন্তু মাত্র ৪/৫ জনে করূন পরিস্থিতি তৈরি সম্ভব নয়। তো কি করা? অন্যরুম থেকে আরো ১৫/১৬ জনকে নিয়ে আসলাম। সবাই চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করলাম। কারও মাথা অন্যের পায়ের তলায়। বালিশের অভাবে বইয়ের উপর মাথা। পরদিনই প্রথম পৃষ্ঠায় খুবই বড় করে সেই ছবি ছাপা হল। ক্লাশে গেলাম, মেয়েরা একটু সহাভূতিশীল দৃষ্টিতে তাকালো। এক বান্ধবী  (গার্লফ্রেন্ড না) জিজ্ঞাসা করল ঘটনা কি? সব খুলে বললাম। আমার গ্রামের বাড়ী থেকে ফোন, বড় ভাইয়ের ফোন, চাচার ফোন। সবার এক কথা এত কষ্ট করে হলে থাকার দরকার নাই। সবাইকে ঐ ছবির কাহিনী খুলে বললে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সম্প্রতি ডেসটিনি নিয়ে দেশে চলছে তুলকালাম কান্ড। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হলো অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন না করতে। অথচ দৈনিক যুগান্তরে শিরোনাম হল ডেসটিনির সাথে লেনদেন না করার পরামর্শ বাংলাদেশ ব্যাংকের। অখছ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঐ রিপোর্টে কোথাও ডেসটিনির নাম নাই।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা অবশ্যই নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ হওয়া উচিত। News should be as it happens.

নারীঃ দেশে দেশে



সাধারনত বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে, এ ধরনের লেখা পড়া ও লেখা দুটোই আমার অপছন্দের। কিন্তু মাঝে মাঝে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে বিষয়গুলো আর এড়াতে পারি না। ক্লাশ টু বা থ্রি থেকেই যখন ইসলাম শিক্ষা বই পড়তাম তখন থেকেই জেনে আসছি নারীকে সর্বপ্রথম প্রকৃত মুক্তি দিয়েছে ইসলাম - যখন নারীদের জীবন্ত কবর দেয়া হত। আমি আমার অত্যন্ত সাধারন দৃষ্টিতে আমাদের ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের নারীদের অবস্থা দেখে মনে হয় নি মুসলমান নারীরা অন্য ধর্মের নারীদের চাইতে সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত কিংবা তাদের বন্দি করে রাখার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। আমাদের ধর্মের মুসলমান নারীরা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আরও অনেক উচ্চ পদে তারা আছে এবং থাকবে। কিন্তু যখন পশ্চিমা বিশ্বগুলো বলতে থাকে যে মুসলমান নারীদেরকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে, ফ্রান্স যখন বলে বোরখা নিষিদ্ধ কারন বোরখা পড়িয়ে মেয়েদের বন্দি করে রাখা হয়, এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোও একই সুরে কথা বলে, তখন গা ঘিনঘিন করতে থাকে, তখন বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে মন চায়। তারা কি কখনো মুসলিম ও ননমুসলিম নারীদের অবস্থা নিয়ে কখনো গবেষনা করেছে? ফ্রান্স কি এখনো তাদের Gang Rape থেকে বেড়িয়ে আসতে পেরেছে।, যেখানে এখনও ১২/১৩ বছরের বালিকারা ৭০/৮০ জনের একটা গ্যাং দ্বারা ধর্ষনের স্বীকার হয়? তারা কি কখনো গুগলে Rape Rate among different country লিখে সার্চ দেয় না? যদি দিত, তবে তারা দেখতো United States Department of Justice এর তথ্যমতে প্রতি আমেরিকান নারীদের ৬ জনের একজন ধর্ষনের স্বীকার হয়, কেবল মাত্র ২০০৫ সালেই ১৯১৬৭০ জন নারী আমেরিকায় ধর্ষনের স্বীকার হয়েছে। The National Crime Victimization Survey এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৭ সালে ধর্ষনের স্বীকার হয়েছে ২৪৮৩০০ জন। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তবে তারা নারীদের মৌলিক অধিকার বলতে কি বোঝে? "খুবই ছোট পোশাক পড়লে ভাল আর একেবারেই না পড়লে আরো ভাল" - এটাকেই কি তারা নারীদের মৌলিক অধিকার মনে করে? মান সম্মান নিয়ে সুস্থ একটা জীবন লিড করাটা মৌলিক অধিকার নাকি ছোট পোশাক পড়ে যেখানে খুশি সেখানে গিয়ে আমেরিকান প্রতি ৬ নারীর ১ জন হওয়া মৌলিক অধিকার? দুখের বিষয় আমাদের দেশেও আজ এধরনের একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে। কিছু নারী আছে যারা আদলটা যত সম্ভব খোলা রাখা আর ছেলেরা তাদের সব শরীরটাকে ঢেকে ফেলাটাকেই এখন ফ্যাশন মনে করে। টাই পড়ে গলাটা অবধি ঢাকতে চাই চাই (টাই পড়নেওয়ালারা রাগ করবেন না ,আমিও টাই পড়াদের একজন)। কিন্তু ব্যাপারটা কিন্তু হওয়ার কথা ছিল উল্টা। আমাদের সংস্কৃতি অনেক উন্নত পর্যায়ে, পোশাক নিয়ে আমাদের আছে দীর্ঘ ইতিহাস। তাই পশ্চিমা বিশ্বের অন্ধ অনুকরন না করে স্বদেশী সংস্কৃতি ও সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা থাকাটাকেই প্রয়োজন মনে করি। অন্য ধর্মের নারীরা কি পোশাক পড়বে সেটা তাদের উপর ছেড়ে দেয়াটাই উত্তম। পোশাক পরিধান বিষয়ক আইন আমরা চাই না।


হেদায়েত করার লোক নাই...




তখন বোধ হয় বিবিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির সেমিনার রুমে পড়ছি। সাথে কয়েকটা ক্লাসমেট ছিল। আলী নামের একটা টকটকা (পাকা টমেটোর মত চেহারা ) ক্লাসমেট ছিল। তার আবার বিশাল সাইজের একটা চাইনিজ মোবাইল ছিল। হঠাৎ করে বলল;
- একটা ভিডিও দেখবি?
- কি ভিডিও?
- এক্সাইটিং। তোর হার্ট শক্ত তো?
- কেন!
- ভয় পাবি না তো?
- কিসের ভয়! দেখা!!
জোর করে তার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে ভিডিওটা দেখলাম। হাত ও চোখ বাধা এক যুবককে চেয়ার থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে জবাই করে তার মাথাটা বুকের উপর রেখে দিল। চার পাঁচজন যুবক এ সময় ”লা ইলাহা ....”,”লা ইলাহা...” বলে উচ্চস্বরে ঐ কোরবানী উপভোগ করছিল। এটা ছিল তালেবানী নৃশংসতা। এক মিনিটেরও কম সময়ের ভিডিও। আমার তিন মাসেরও বেশি সময় লেগেছিল ঐ দৃশ্য ভুলতে এবং নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ করতে। বাল্যকালে আমি নিজে হাস, মুরগী, মাছরাঙ্গা, চড়াই, টুনটুনি এবং রাম শালিক গুলতি দিয়ে শিকার করে জবাই করেছি। কোন ভাবাবেগই হয়নি। কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও আমাকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ করে রেখেছিল বেশ কিছুদিন। সম্ভবত “মানব বলি” জাতীয় কোন চিন্তা মাথায় ছিল না। সেই দৃশ্য ভুলতে না ভুলতেই দেখতে হলো আটজনকে জবাই করার দৃশ্য। তাও এবার স্বদেশী- আমাদের বাংলাদেশী দরিদ্র আট ভাই। শরীয়া আইনে কি বলা আছে ঠিক জানি না। কমনসেন্স দিয়ে জানি, খুনের বদলে খুন প্রায় সব দেশেই আছে। কেউ বিষপ্রয়োগে, কেউ ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে, কেউ পাথর ছুড়ে, কেউ ফাসি আবার কেউ পাঠা বলি টাইপ শিরচ্ছেদ করে এই নিয়ম প্রয়োগ করে। অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিশ্বের সব সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ একসাথে আটজন মানুষকে শিরচ্ছেদের ঘটনাকে নৃশংস ও মধ্যযুগীয় বর্বরতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বার্ট্রান্ড রাসেলের মত একজন খাটি নাস্তিক পর্যন্ত ইসলাম ধর্মকে "মোষ্ট সিভিলাইজ্ড” ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর আইনের দোহাই দিয়ে সৌদি সরকার যা করলো তা মানা যায় না। এখন আবার বিশ্বের সব ইসলাম বিদ্বেষী শক্তি চিৎকার চেচামেচি করে বলবে যে, ইসলাম হচ্ছে একটা বর্বর, নৃশংস ও উগ্রদের ধর্ম। অন্য ধর্মের লোকজন এখন আমাদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। এই আটজন হতভাগ্য যদি আজকে আমেরিকান বা ইহুদি হতো, তবে সৌদি আরব ঠিকই আল্লাহর আইনের কোন না কোন ফাক ফোকর খুজে বের করে ফেলতো। যা তারা বিভিন্ন সময়ে করেছে। আল্লাহর আইনের দোহাই দিয়ে এতদিন নারীদের গাড়ী চালানো নিষিদ্ধ ছিল, সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহন নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। এখন আরব গন জাগরন থেকে রক্ষা করতে তারা তো ঠিকই আল্লাহর আইনের ফাক ফোকর পেয়ে গেল। এখন ওখানকার নারীরা গাড়ী চালায়, নির্বাচনে দাড়াতে পাবে। সবিশেষ বলতে চাই, যত নবী রাসূল এই দুনিয়ায় আসছে সব মধ্যপ্রাচ্যে। কেন?? কারন কোন জাতি যখন অসভ্য, বর্বর ও নৃশংসতার চরমে পৌছল, তখন তাদের হেদায়েতের জন্য সেখানে আল্লাহ তায়ালা নবী রাসূল প্রেরন করতেন। যা এখন সৌদিতে খুব দরকার। কিন্তু হায়...! আর কোন নবী রাসূল এই দুনিয়ায় আসবেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন