ভূত
বয়স যখন ৭/৮ তখন ছোট কাকা আমার পিঠ চুলকায়া দিত, আর বাড়ির বড় মেয়েরা মাথায় বিলি কেট দিত। দুটো কাজই ছিল আমার বড় প্রিয়। মাথায় বিলি যারা কাটত তাদের মধ্যে একজন ছিল আমার বোনের বান্ধবী যার নাম আমি ভুলে গেছি। ঐ আপুটা অনেক সুন্দরী ছিল। আমার মনে আছে আমি তার সাথে বিলে কলমি শাক তুলতে যেতাম।আরো ছেলেমেয়েরা যেত। কিন্তু একদিন শুনলাম মেয়েটাকে ভুতে ধরেছে! আমি দেখতে যাই নাই। তখন ভূতকে অনেক ভয় পেতাম।ফকির আসল, নানা ট্রিটমেন্ট চলতে লাগল, ঝাটার বাড়ি, নাক দিয়ে ধুয়া দেয়া আরো কত কি! কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়েটা মারা গেল।আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।তাই আজো নাম ভুলে গেছি কিন্তু ঘটনাটা মনে আছে।তারপর থেকে আর কাউকেই ভুতে ধরেছে শুনি নাই।
*****************
বন্ধু...
বয়স যখন ৭/৮ তখন ছোট কাকা আমার পিঠ চুলকায়া দিত, আর বাড়ির বড় মেয়েরা মাথায় বিলি কেট দিত। দুটো কাজই ছিল আমার বড় প্রিয়। মাথায় বিলি যারা কাটত তাদের মধ্যে একজন ছিল আমার বোনের বান্ধবী যার নাম আমি ভুলে গেছি। ঐ আপুটা অনেক সুন্দরী ছিল। আমার মনে আছে আমি তার সাথে বিলে কলমি শাক তুলতে যেতাম।আরো ছেলেমেয়েরা যেত। কিন্তু একদিন শুনলাম মেয়েটাকে ভুতে ধরেছে! আমি দেখতে যাই নাই। তখন ভূতকে অনেক ভয় পেতাম।ফকির আসল, নানা ট্রিটমেন্ট চলতে লাগল, ঝাটার বাড়ি, নাক দিয়ে ধুয়া দেয়া আরো কত কি! কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়েটা মারা গেল।আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।তাই আজো নাম ভুলে গেছি কিন্তু ঘটনাটা মনে আছে।তারপর থেকে আর কাউকেই ভুতে ধরেছে শুনি নাই।
*****************
বন্ধু...
অষ্টম
শ্রেনী পর্যন্ত আমার জীবন ছিল অনেকটা ভেজিটেবল জাতীয়। ডানে বামে না
তাকিয়ে স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা করা, রাতে টিভি দেখা। নবম শ্রেনীর
মাঝামাঝি আমার জীবনে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। আমার চিন্তাভাবনা,
ভাললাগা সবকিছুতেই একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসে। নতুন থানা হল মাত্র।
ইলেক্ট্রিসিটিও নতুন আসছে। প্রতিদিনকার রুটিনের মতই আমি বিকাল বেলা ক্রিকেট
কিংবা ফুটবল খেলা শেষ করে এক সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম। উঠানে দেখলাম মা এক
মহিলা ও আমার বয়সী একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। মা আমাকে তাদের সাথে
পরিচয় করিয়ে দিল। এটা আমার ছেলে। ক্লাস টেনে পড়ে। ফার্ষ্ট বয়! ইত্যাদি
ইত্যাদি। বিদায় নিয়ে আমার রুমে আমি ঢুকে গেলাম। পরদিন সকাল বেলা স্কুলে
গিয়ে দেখি নতুন একটা ছেলে ও একটা মেয়ে। মেয়েটাকে চিনলাম। আগেরদিন যে
মেয়েটার সাথে উঠানে পরিচয় হয়েছিল। আরো কিছুক্ষন পর জানলাম ঐ ছেলেটা
মেয়েটার ভাই এবং তারা নতুন থানার এক দারোগার ছেলেমেয়ে। খুব অল্প দিনেই
তাদের সাথে আমার গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কোন এক বিচিত্র কারনে যাদের সাথে
আগে থেকেই আমি এত বছর ধরে পড়াশোনা করছি তাদের সাথে অতটা গভীর বন্ধুত্ব হয়
নি। তাদের কথাবার্তা, চিন্তাধারা আমার কাছে আকর্ষনহীন ছিল। নতুন ছেলেটার
নাম জুয়েল। প্রায় ছয় ফিট লম্বা। আমার চাইতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি
লম্বা! খুব অল্পদিনেই আবিস্কার করলাম ছাত্র হিসেবে ভাল না হলেও তার আধুনিক
চিন্তাধারা অন্য সকলের চাইতে আকর্ষনীয়। খুব ভাল দাবা খেলতে পারে এবং
প্রযুক্তিতে ভাল দক্ষতা। গ্রামে তখনও মোবাইলের নাম গন্ধ নাই। তাদের বাসা
থেকে আমাদের বাসা ছিল কমপক্ষে এক মাইল দূরে। সে ট্রানজিষ্টারের দুটো চুম্বক
দিয়ে আমাদের বাসার সাথে তাদের বাসার একটা টেলিফোন লাইন স্থাপন করে ফেলল!
তাদের পুরো পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের খুব গভীর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে
গেল। জুয়েলের সাথে আমার শুরু হল রাতদিন আড্ডা। নতুন নতুন চিন্তাভাবনা।
একদিন সে আবিস্কার করল আমি লেখালেখি করতে পারি। স্কুলে একটা নতুন নাটক করতে
হবে। নাটক লেখার দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। আমরা প্রতিদিন নাটকের কাহিনী
নিয়ে আলোচনা করতাম। রিহার্সেল করতাম। আমাদের সাথে জুটে গেল আরো অনেক
বন্ধু। আরিফ, সুমন. হারুন, মেরি, মুন্নী সহ আরো অনেকে। কোন একটা কারনে আমরা
নাটকটা মঞ্চস্থ করতে পারি নি। তারপর হঠাৎ করে আমার জীবনে নেমে এল এক
ভয়াবহ দুর্যোগ। টেষ্ট পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার কিছুদিন পরই তারা
ট্রান্সফার হয়ে চলে যায় আরেক থানায়। পুরো এক সপ্তাহ আমি ছিলাম ভয়াবহ
কষ্টে। এস.এস.সি পরীক্ষা নাকের ডগায় কিন্তু আমি পড়াশোনা করতে পারছি না।
আমার মা ব্যাপারটা বুঝতে পারল। আমাকে বুঝাতে লাগলেন । আমি ধীরে ধীরে মানসিক
শক্তি অর্জন করে পড়াশোন শেষ করলাম। তারপর ইন্টারমেডিয়েট শেষ হল,
মাষ্টার্সও শেষ হয়ে গেল। জুয়েলের সাথে আমার এখন দেখা হয়। প্রায়ই দেখা
হয়। সে এখন একজন আর্কিটেক্ট। আমি সারাজীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো আমাকে
অতি অল্প সময়ের জন্য হলেও আনন্দময় শৈশব উপহার দেয়ার জন্য। আমাকে নতুন
জীবনের পথ প্রদর্শনের জন্য। ভেজিটেবল টাইপ জীবন থেকে আমাকে মুক্তি দেয়ার
জন্য। ধন্যবাদ বন্ধু....
***************************
ছিনতাইকারী .. ..
- সিটিসেল নাকি? (এই প্রশ্নে আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম। কারন আমার ছিল তখন একটেল কানেকশন। কিন্তু সত্য বললেও বিপদ!)
- জ্বি ভাই। বের করবো?
- নাহ্ , বের করার দরকার নাই। মানিব্যাগ বের করছো না কেন? মরার ভয় নাই?
- জ্বি না, ভয় পাচ্ছি না। কারণ আশেপাশে অনেক লোক চলাচল করছে। মাত্র কিছু টাকার জন্য আপনি আমাকে খুন করার মত বোকামী করবেন না।
-তুমি বলছ তোমার কাছে অল্প টাকা ?
- জ্বি।
- ঠিক আছে। চলে যাও। ডানেবামে তাকাবে না, সোজা। একদম সোজা।
(বি .দ্র. ঐ ঘটনায় ঐ সময় কোন ভয় পাই নি। কিন্তু এখনও স্মরন করলে ভয় লাগে। বুকের ডান পাশে চিন চিন করে ব্যাথা করে।)
*****************************
সিগারেট ও ফেমিনিন জেন্ডার বিষয়ক...
***************************
ছিনতাইকারী .. ..
২০০৫ সালের মাঝামাঝি। মালিবাগ
চৌধুরীপাড়ায় একটা টিউশনি করতাম। স্টুডেন্টের নাম ছিল রাফসান এন. সিদ্দিকি
(আমার প্রথম স্টুডেন্ট)। সন্ধ্যার পর পড়াতে হতো। একবার প্রায় রাত ৯ বাজে।
ফিরছিলাম হলের দিকে। হেটে হেটে। মৌচাক আসার আগেই হঠাৎ একটা গুন্ডা চেহারার
লোক আমাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করতে শুরু করলো। আমাকে অন্য একটা নামে
ডাকতেছিল। আমি বারবার বলতেছিলাম ভাই, আমার নাম ওটা না! আমাদের দুপাশ দিয়ে
অনেক পথচারী চলাচল করছে। আমরা পূর্ব পরিচিত- এটা পথচারীদের বুঝানোর জন্যই
যে গুন্ডা কোলাকুলি করছিল সেটা বুঝলাম কিছুক্ষন পর। কানে কানে ফিসফিসিয়ে
বলল, সে এই এলাকার বড় ভাই। আমার পেটে কিসের যেন একটা ঠেক দিল। চিৎকার দিলেই
নিশ্চিত মৃত্যু। দৌড় দিয়েও লাভ নাই, অনেকদূরে একজনকে দেখিয়ে বলল সে তারই
লোক। ঐ লোকটা হাত তুলে ইশারা করল আবার। এবার দাবি দাওয়ার পালা। তারা ক্লাবে
যাবে। হার্ড ড্রিংকস খাওয়া দরকার। টাকা পয়সার ঘাটতি যাচ্ছে। টাকা দরকার।
আমার কপাল ভাল কিংবা তাদের কপাল খারাপ ছিল। আমার মানিব্যাগে বড়জোর ২০ টাকা
ছিল। বললাম ভাই মানিব্যাগে কোন টাকা নেই। বলল- বের করে দেখাও। বললাম-
ভাইজান বের করে দেখানোর কিছু নেই। আমার পড়নে ছিল জিন্সপ্যান্ট। সুতরাং
পকেটে যে মোবাইল আছে সেখানে তাদের নজর পড়ল। বলল- মোবাইল ?
- জ্বি ভাই।- সিটিসেল নাকি? (এই প্রশ্নে আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম। কারন আমার ছিল তখন একটেল কানেকশন। কিন্তু সত্য বললেও বিপদ!)
- জ্বি ভাই। বের করবো?
- নাহ্ , বের করার দরকার নাই। মানিব্যাগ বের করছো না কেন? মরার ভয় নাই?
- জ্বি না, ভয় পাচ্ছি না। কারণ আশেপাশে অনেক লোক চলাচল করছে। মাত্র কিছু টাকার জন্য আপনি আমাকে খুন করার মত বোকামী করবেন না।
-তুমি বলছ তোমার কাছে অল্প টাকা ?
- জ্বি।
- ঠিক আছে। চলে যাও। ডানেবামে তাকাবে না, সোজা। একদম সোজা।
(বি .দ্র. ঐ ঘটনায় ঐ সময় কোন ভয় পাই নি। কিন্তু এখনও স্মরন করলে ভয় লাগে। বুকের ডান পাশে চিন চিন করে ব্যাথা করে।)
*****************************
সিগারেট ও ফেমিনিন জেন্ডার বিষয়ক...
অনেকদিন পর পর আপার বাসায় যাওয়া হয়।
আমি আপার বাসায় গেলাম। আপা খুব ব্যস্ত ছিল। আমাকে বাসায় একা রেখে চলে গেল
তার কাজে। বাসা পুরাই খালী। স্মোকিংয়ের অভ্যাস আছে। সুতরাং ধরিয়ে ফেললাম এক
শলাকা। মনের সুখে টানছি। সদর দরজা খোলা কিন্তু সেটা খেয়াল করতে পারি নাই।
হঠাৎ দরজায় ধাক্কাধাক্কি। ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম বড় আপা আসলো কিনা। কাছে
গিয়ে দেখলাম, না- আপা না। সমবয়সী একটা ফেমিনিন জেন্ডার। আমাকে সিগারেটের
নানা ক্ষতিকর দিক গুলো আবার আবার স্মরন করিয়ে দিচ্ছিল। আমি তো ভাবলাম,
বাড়িওয়ালার মেয়ে কিনা!! ভয়ে বারবার ‘সরি’ বলতে লাগলাম। আর খাব না। আর কত
কি! বেশ কিছুক্ষন ভয়ে অস্থির থাকলাম। আপা কে আবার বলে দেয় কিনা। আপা তখনও
জানতো না আমি স্মোক করি। সন্ধ্যার দিকে আপা বাসায় ফিরে। সেই চিজ এবার বাসার
ভিতরে ঢুকলো। আমি তখন আতঙ্কের শেষ সীমানায়। মেয়েটা চলে যাবার পর বেশ
কিছুক্ষন সময় কেটে গেল। দেখি আপা কিছুই বলছে না। শেষপর্যন্ত আপাকে জিজ্ঞেস
করেই ফেললাম, মেয়েটা কে? আপা বললো- বাড়ীওয়ালার কাজের মেয়ে।
**************************
আমার হল জীবন:
**************************
আমার হল জীবন:
ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়াটা ছিল
আমার কাছে একটা স্বপ্নের মত। ক্লাশ শুরুর আগেই হলে উঠে যাই। প্রথমেই হলে
উঠার গল্পটা বলে নেই। আমি এটাচ ছিলাম মুহসীন হলে। কিন্তু মুহসীন হলে কেউ
পরিচিত ছিল না বলে প্রথমে ঐ হলে উঠতে পারি নাই। উঠলাম বুয়েটের রশিদ হলে
গ্রামের এক বন্ধুর রুমে। আমরা দুজনেই ঢাকা কলেজ থেকে পাশ করেছি। প্রায় মাস
খানেক থাকার পর আমার বন্ধু আব্দুর রশিদ সম্রাট আমাকে নিয়ে আসল ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলে। সেখানে আমাদের নিজ এলাকার এক বড় ভাই থাকতেন
গনরুমে। আমি তার সাথেই থাকা শুরু করলাম। মাস দুয়েক পরে আমার বড় ভাই মুহসীন
হলের এক নেতার সাথে পরিচয় করে দিলেন। আমি উঠে গেলাম মুহসীন হলে ৫/ক
গনরুমে। মনে আছে তখন (২০০৫ সালে) নতুন ছাত্রদের মধ্যে আমিই ছিলাম প্রথম যে
কিনা হলে উঠেছি। তখনও নেতারা হলে ছাত্র তোলা শুরু করেনি। খুব স্বাভাবিক
ভাবেই বড় নেতারা এসে হুমকি থামকি দেয়া শুরু করলেন হল ছাড়ার জন্য। আমাকে যে
নেতা তুলেছিল (নাম দিলাম করিম) তিনিই সব কিছু ম্যানেজ করে ঐ যাত্রার আমাকে
বাচালেন। দিন পার হতে লাগলো। করিম ভাই মাঝে মধ্যেই আমার কাছ থেকে টাকা ধার
নিতেন। ঐ টাকা আর কখনই ফেরত দিতেন না। আমি তখন মাত্র ১৫০০ টাকার একটা
টিউশনি করি| সেই টাকা দিয়েই চলি। খুব কষ্ট করে সেখান থেকে কিছু টাকা সেভ
করে আর বাকীটা সম্রাটের কাছ থেকে ধার নিয়ে একটা মোবাইল কিনি। মনে আছে
ব্রান্ড ছিল এক্স- ২০০। মোবাইল কেনার প্রায় সাত দিন পর করিম ভাই আমার কাছ
থেকে ৫০০ টাকা চেয়ে বসলেন। যেহেতু উনি ফেরত দিবেন না আমি বললাম ভাই আমার
কাছে কোন টাকা নাই। পরদিন সকালেই ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার মোবাইল সহ
ভার্সিটিতে যাওয়ার ব্যাগটা রুম থেকে উধাও। করিম ভাই কখনই সকাল ১১ টার আগে
ঘুম থেকে উঠতেন না, মোবাইল চুরির দিনই উনি ঘুম থেকে উঠেছিলেন সকাল ৬ টা !!!
আর ফেরত পেলাম না আমার বহু কষ্টার্জিত সেই মোবাইল, বেশ কিছু স্বরচিত কবিতা
সহ দু দুটো ডায়েরী। ঐ মোবাইলের জন্য খুব বেশি ভেঙ্গে পড়েছিলাম।
নিজের প্রেম নিয়ে আমার একটা অন্যরকম
ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসটাই আজ বলব। প্রথম সেমিষ্টারের ক্লাশ শুরুর সাথে
সাখে ক্লাশ টিচার ঘোষনা দিলেন গ্রুপ করতে। আমরা তখন গ্রুপ করা শুরু করছি।
ঢাকা কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাত্র আমি আর শাহীন (কলেজ ফ্রেন্ড) চান্স
পেয়েছি। অন্যরা কলেজ বা কোচিং থেকে পূর্ব পরিচিতদের নিয়ে গ্রুপ করে ফেলছে।
তার উপরে আমি কোচিং করিনি। সুতরাং আমার পরিচিত বলতে শুধু শাহীন। শাহীন
কোচিং থেকে পূর্ব পরিচিত ফারজানা নামের একজনকে পরিচয় করে দিল। গ্রুপে তখন
মাত্র তিনজন। আরও ৫ জন দরকার। ফারজানা একদিন মুন্নী নামের একজনকে নিয়ে এসে
ঘোষনা করলো এই মেয়ে এখন থেকে গ্রুপের মেম্বার। আমি খুবই বিরক্ত হলাম। ঠিক
জানি না কি কারনে বিরক্ত হলাম। মুন্নীকে আমি প্রথমে দু চোখেই দেখতে পারতাম
না। একেতো শ্যামলা তা বেশ কিছুটা অস্থিরমতি। এই মেয়েটার সঙ্গেই একসময় আমার
প্রেম হয়ে গেল। যত সহজে বলে ফেললাম প্রেমটা তত সহজে হয় নি। আমাদের দুজনের
পথ ছিল সম্পূর্ন দু দিকে। সময় পার হওয়ার সাথে সাথে তাকে আমার ভাল লাগা শুরু
করল। বলে ফেললাম। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাখ্যান(প্রত্যাখ্যান করাটাই
স্বাভাবিক ছিল)। আমি কিছুটা ভিলেন টাইপ আচরন করা শুরু করলাম। আমাদের গ্রুপ
ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল। আমি তাকে প্রায়ই ফোনে উল্টাপাল্টা কথা বলতাম, ভয়
দেখাতাম। বলতাম পানি তো খাবি, একটু ঘোলা করে খাবি আর কি !! ডেসপারেট প্রেম
যাকে বলে! একদিন তো হুইস্কি খেয়ে মাতাল হয়ে ফোন করে যত উল্টাপাল্টা কথা বলা
যায় সব বললাম। এভাবেই পার হয়ে যায় পুরো তিনটা বছর। চতুর্থ বর্ষের শেষ দিকে
ক্লাশ থেকে ঘোষনা করল চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে একটা ক্লাশ পার্টি করা
হবে। আমি তখন মাঝে মাঝে হ্যান্ডিক্যাম দিয়ে ছোট ছোট নাটিকা তৈরি করতাম। তাও
সব গ্রামে। ক্লাশের কেউ কেউ সেটা জানতো। তারা ধরল আমাকে একটা নাটক করে
দিতে হবে। আর তখনই খেললাম আসল খেলা। নাটকের নাম রাখলাম ’রূপান্তর’।
স্ক্রিপটা এমন ভাবে লিখলাম যাতে তার মনের মধ্যে গিয়ে আঘাত করে। নাটকের
পাত্রপাত্রীর ডায়লগে ঢুকিয়ে দিলাম আমাদের ফোনালাপের বেশ কিছু ডায়লগ। নাটক
বড় পর্দায় প্রদর্শিত হলো। নাটক শেষে সবার অপ্রত্যাশিত হাততালি পেয়ে আমি
সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে সুখটুকু অনুভব করলাম। নাটক শেষে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার
সাথে সাথে হলে এসে দিলাম লম্বা একটা ঘুম। জানতাম রিয়েকশন শুরু হয়ে যাবে।
ফোন করলো ক্লাশ ফ্রেন্ড জনি। ফোন পেয়ে ছুটে গেলাম সিনেট ভবনের সামনে। গিয়ে
দেখি জনির সাথে মুন্নী একটা লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে আছে! হাতে যদিও লাঠি, মুখে
দুষ্টুমি হাসি !! আমি বুঝে ফেললাম কাজ হয়েছে। এবং সত্যি সত্যি কাজ
হয়েছে।...
**********************************
"এবং হিমু ও একটি নিরস বিকাল"
সময়টা কখন হবে? খুব সম্ভবত ক্লাশ এইট নাইনে পড়ি। ১৯৯৯ কিংবা ২০০০ সালের কোন এক খুব মন খারাপ করা বিকাল। খুব মন খারাপ ছিল কারন, ঐদিন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। আর বিকালবেলা বৃষ্টি মানেই, বিকালের খেলাধুলা বন্ধ। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত, বন্ধরা কেউই মাঠে বেরুবে না। বাসাতেও কিছু করার ছিল না। কি করা যায়? বাসায় বেশ কিছু উপন্যাস ছিল। একটা ছিল হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস "এবং হিমু"। অনেকদিন থেকেই বইটা বাসায় ছিল। কোনদিন পড়তে ইচ্ছা হয় নি। পাঠ্যপুস্তকের যন্ত্রনায়ই অস্থির ছিলাম, উপন্যাস পড়ার টাইম কোথায়? একেবারেই কিছুই করার নেই বলেই, বউটা পুরনো আলমারি থেকে বের করলাম। খুব কষ্টে প্রথম কয়েক লাইন পড়লাম। এরপর..আমি কেমন জানি আটকা পড়ে গেলাম। আমি এক ঘোরের জগতে চলে গেলাম। হিমু এক গালে পুলিশের থাপ্পর খাওয়ার পর আরেক গালে থাপ্পর খাওয়ার জন্য তাদের পিছু পিছু হাটার ঘটনা আমাকে কিঞ্চিত ভাবায়। এ ধরেনের কারেক্টার কি কোন লেখায় এর আগে পেয়েছি? মনে আছে, ঠিক এক শোয়াতেই আমি পুরো উপন্যাসটা পড়ে শেষ করে ফেললাম। আর সারাটা বিকেল রাত আমি শুধু উপন্যাসটার ঘটনা চরিত্র এসব নিয়েই ভাবতে লাগলাম। আমার নিরস ঐ বিকেলটা এক অন্যরকম সম্পূর্ণ নতুন এক আনন্দ আমাকে অভিভূত করল। সেই থেকে শুরু....। ধন্যবাদ প্রিয় হুমায়ুন আহমেদকে, আমাকে, আমাদের এই প্রজন্মকে সম্পূর্ন নতুন এক আনন্দ উপহার দেয়ার জন্য।
**********************************
"এবং হিমু ও একটি নিরস বিকাল"
সময়টা কখন হবে? খুব সম্ভবত ক্লাশ এইট নাইনে পড়ি। ১৯৯৯ কিংবা ২০০০ সালের কোন এক খুব মন খারাপ করা বিকাল। খুব মন খারাপ ছিল কারন, ঐদিন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। আর বিকালবেলা বৃষ্টি মানেই, বিকালের খেলাধুলা বন্ধ। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত, বন্ধরা কেউই মাঠে বেরুবে না। বাসাতেও কিছু করার ছিল না। কি করা যায়? বাসায় বেশ কিছু উপন্যাস ছিল। একটা ছিল হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস "এবং হিমু"। অনেকদিন থেকেই বইটা বাসায় ছিল। কোনদিন পড়তে ইচ্ছা হয় নি। পাঠ্যপুস্তকের যন্ত্রনায়ই অস্থির ছিলাম, উপন্যাস পড়ার টাইম কোথায়? একেবারেই কিছুই করার নেই বলেই, বউটা পুরনো আলমারি থেকে বের করলাম। খুব কষ্টে প্রথম কয়েক লাইন পড়লাম। এরপর..আমি কেমন জানি আটকা পড়ে গেলাম। আমি এক ঘোরের জগতে চলে গেলাম। হিমু এক গালে পুলিশের থাপ্পর খাওয়ার পর আরেক গালে থাপ্পর খাওয়ার জন্য তাদের পিছু পিছু হাটার ঘটনা আমাকে কিঞ্চিত ভাবায়। এ ধরেনের কারেক্টার কি কোন লেখায় এর আগে পেয়েছি? মনে আছে, ঠিক এক শোয়াতেই আমি পুরো উপন্যাসটা পড়ে শেষ করে ফেললাম। আর সারাটা বিকেল রাত আমি শুধু উপন্যাসটার ঘটনা চরিত্র এসব নিয়েই ভাবতে লাগলাম। আমার নিরস ঐ বিকেলটা এক অন্যরকম সম্পূর্ণ নতুন এক আনন্দ আমাকে অভিভূত করল। সেই থেকে শুরু....। ধন্যবাদ প্রিয় হুমায়ুন আহমেদকে, আমাকে, আমাদের এই প্রজন্মকে সম্পূর্ন নতুন এক আনন্দ উপহার দেয়ার জন্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন